২৭টি স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক টিপস যা থেকে অন্যরা উপকার পেয়েছেন বলে প্রমাণিত!



স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি বিষয়ে আসলে বিভ্রান্ত হওয়া সহজ। কেননা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক পরামর্শের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পুষ্টিবিদদের মাঝে মতপার্থক্য থাকার কারণে সঠিক দিকনির্দেশনা লাভ করা সত্যি বেশ কঠিন ব্যাপার। তবুও, সমস্ত মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, কিছু পরামর্শ গবেষণার মধ্য দিয়ে সুস্বাস্থ্যের জন্য অনুসরণীয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করতে সমর্থ হয়েছে।
এই পোস্টে সেই সব বিজ্ঞানসম্মত স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক প্রমাণিত পরামর্শ থেকে ২৭টি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ আপনাদের জন্য নিম্নে উপস্থাপন করা হল:-

১. চিনির ক্যালোরি পান করবেন না

চিনিযুক্ত পানীয় হল আপনার শরীরের মেদ বৃদ্ধির অন্যতম প্রভাবক অর্থাৎ এটি সবচেয়ে মেদযুক্ত আইটেমগুলির মধ্যে একটি।। কঠিন খাবার থেকে গ্রহীত ক্যালরিকে মস্তিষ্ক যেভাবে প্রক্রিয়াজাত করে থাকে, তরল চিনিযুক্ত পানীয়ের ক্ষেত্রে সেইভাবে কাজ করে না। যার জন্যে, আপনি যখন সোডা জাতীয় পানীয় পান করছেন, আপনি অপেক্ষাকৃত বেশি মাত্রায় ক্যালরি গ্রহণ করে ফেলছেন। চিনিযুক্ত পানীয় মেদবাহুল্য বা স্থুলতার সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কযুক্ত। এটি টাইপ-২ ডায়বেটিসসহ বহু প্রকারের স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য দায়ী।
মনে রাখবেন যে, এই তালিকায় কিছু বিশেষ ফলের জুসও রয়েছে। কারণ, সেগুলোতেও এমনই অধিকমাত্রায় চিনি ব্যবহৃত হয়েছে। এমন জুসে যে সামান্য পরিমাণে এন্টি-অক্সিডেন্টস থাকে, তা চিনির ক্ষতিকারক প্রভাবকে অকার্যকর করার জন্য যথেষ্ট নয়।

২. বাদাম খান

চর্বিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও বাদাম বেশ পুষ্টিগুণসম্মত এবং স্বাস্থ্যকর। বাদাম ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন-ই, ফাইবার এবং আরো বিভিন্ন প্রকার নিউট্রিয়েন্টসে ভরপুর। গবেষণায় দেখা গেছে, বাদাম ওজন কমাতে সহায়ক। এমনকি হৃদরোগ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাসেও বাদাম সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
বাদামের শতকরা ১০-১৫ শতাংশ ক্যালরি শরীরে শোষিত হয় না। এর ফলে, বাদামের কারণে মেদ বৃদ্ধির দুশ্চিন্তাও আর থাকছে না। কিছু গবেষণালব্ধ ফলাফলে আরো ইঙ্গিত মেলে যে, এটি পরিপাকক্রিয়ার জন্যও বেশ উপকারি।
আরেকটি পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, কাঠবাদাম অন্যান্য কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেডসমূহের (complex carbohydrates) তুলনায় শতকরা ৬২ শতাংশ দ্রুত ওজন হ্রাসে ভূমিকা রাখে।

৩. প্রক্রিয়াজাত জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন (পরিবর্তে আসল খাবার/ রান্না করা খাবার খান)

প্রক্রিয়াজাতকৃত জাঙ্কফুড স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এরকম খাদ্যগুলো তৈরিই করা হয়েছে কেবলমাত্র মস্তিষ্কের পরিতৃপ্তির কেন্দ্রবিন্দুকে উত্তেজিত করার কথা মাথায় রেখে। যার জন্য, জাঙ্কফুড বহু মানুষকেই অতিভোজনের নেশায় প্ররোচিত করে। এমনিতে, বেশিরভাগ জাঙ্কফুডে ফাইবার (fiber), প্রোটিন (protein) আর মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্টেসের (micro-nutrients) মাত্রা কম থাকে। এমন খাবারগুলোয় মাত্রাতিরিক্ত চিনি, পরিশোধিত শস্য থাকে যা শুধুই ক্যালরি বৃদ্ধি ছাড়া আর কোনো উপকারে আসে না।

৪. কফি ভয় করবেন না তথা কফিকে না বলবেন না!

কফি নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যকর।
এটিতে উচ্চমাত্রায় এন্টিঅক্সিডেন্টস (antioxidants) থাকে। কিছু গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে যে, কফি দীর্ঘায়ু লাভে সহায়ক এবং কফি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। পার্কিনসন্স ডিজিজ ও এ্যালযাইমার্স’ ডিজিজ (Parkinson’s and Alzheimer’s diseases) এবং আরো বহু রোগের হাত থেকে রক্ষায় কফির ভূমিকা উল্লেখ্যযোগ্য।

৫. চর্বিযুক্ত মাছ খান

মানসম্মত প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বির যোগানে মাছ একটি স্বীকৃত উৎস। স্যামন মাছের (দেশী রুই) মত চর্বিযুক্ত মাছগুলোর ক্ষেত্রে কথাটি পুরোপুরি সত্য। এ ধরণের মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড (omega-3 fatty acid) ও আরো বিভিন্ন পুষ্টিগুণ রয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যারা বেশি বেশি মাছ খানে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ততই কম মাত্রায় থাকে। হৃদরোগ, স্মৃতিভ্রম এবং দুশ্চিন্তা থেকে তারাও অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত হন।

৬. পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন

পর্যাপ্ত ঘুমের গুরুত্ব না বললেই নয়। অপর্যাপ্ত ঘুমের ফলে শরীর ইনসুলিন প্রতিরোধী হয়ে পড়ে। এছাড়াও, কম ঘুম পরিপাকে সহায়ক হরমোনের তারতম্য এবং দৈহিক ও মানসিক কার্যকারিতাও হ্রাস পায়। সন্তোষজনক ঘুম না হলে সবচেয়ে বড় যে ক্ষতির সম্মুখীন হবার সম্ভাবনা থাকে, তা হলো: মেদ বৃদ্ধি। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে অপর্যাপ্ত ঘুম শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে মেদবাহুল্যের বৃদ্ধি ঘটিয়েছে যথাক্রমে ৮৯% ও ৫৫% হারে।

৭. পাকস্থলির যত্ন নিন প্রোবায়োটিক্স ও ফাইবার (probiotics and fiber) দিয়ে

পাকস্থলিতে থাকা ব্যাকটেরিয়াকে সামষ্টিকভাবে গাট মাইক্রোবায়োটা (gut microbiota) বলে। যা সামগ্রিক সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই গাট ব্যাকটেরিয়ার তারতম্য ঘটলে মেদবাহুল্যসহ জটিল সব রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে। পাকস্থলির যত্নে এইজন্য চাই দই (yogurt) ও সাওয়ারক্রাটের (sauerkraut) মত প্রোবায়োটিক খাদ্যের। এছাড়াও চাই প্রচুর পরিমাণে ফাইবারসমৃদ্ধ খাদ্যে। ফাইবার পাকস্থলির ব্যাকটেরিয়াকে কর্মক্ষম করতে প্রয়োজনীয় জ্বালানীর যোগান দেয়।

৮. খাবার পূর্বে অল্প পরিমাণে পানি পানের অভ্যাস করুন

পর্যাপ্ত পানি পানের অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। বিস্ময়করভাবে, এটি ক্যালরি বার্নিংর মাত্রাও বৃদ্ধি করে। দুই ভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এই অভ্যাসে এক থেকে দেড় ঘন্টায় মেটাবলিযমের শতকরা হার বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪ থেকে ৩০ শতাংশ। আপনি যদি ৮.৪ কাপ বা দুই লিটার পরিমাণ পানি পান করেন তবে, এটি প্রায় ৯৬ ক্যালরি হ্রাসে ভূমিকা রাখবে।
খাবার আগের সময়ই পানি পানের মোক্ষম সময়। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ২.১ কাপ বা ৫০০মি.লি. পানি প্রতিবার খাবার গ্রহণের ৩০মিনিট পূর্বে পান করার ফলে শতকরা ৪৪ শতাংশ ওজন হ্রাস পেয়েছে।

৯. মাংস বেশি রান্না বা পুড়িয়ে ফেলা থেকে বিরত থাকুন

মাংস খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর একটি অংশ হতে পারে। এতে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন ও পুষ্টিগুণ (nutrients) রয়েছে। তবে, সমস্যা হয় যখন মাংস বেশি রান্না হয়ে যায় বা পুড়ে যায়। এর ফলে মাংসের মধ্য ক্ষতিকারক উপাদান তৈরি হয় যা, ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। তাই, মাংস রান্নার ক্ষেত্রে সতর্কদৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।

১০. ঘুমের পূর্বে তীব্র আলো পরিহার করুন

সন্ধ্যা থেকে তীব্র আলোয় থাকলে ঘুমে সহায়ক হরমোন মেলাটোনিন (melatonin) উৎপন্ন হবার প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ জন্য, একটি কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে; আলোর উৎসের সামনে লাল রঙের কাঁচের শেড ব্যবহার করে চোখে নীল আলো প্রবেশ প্রতিহত করা। এতে করে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মেলাটোনিন হরমোন উৎপাদন হতে থাকবে। ফলে আপনিও অপেক্ষাকৃতভাবে ভালো ঘুম পাবেন।

Post a Comment

0 Comments