ট্রিপল সেঞ্চুরির চেয়ে ব্যাটিংয়ের ধরনে বেশি খুশি তামিম



এক সময় মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি থাকলেও সময়ের পরিবর্তনে উইকেটে মানিয়ে নিয়ে লম্বা ইনিংস খেলাকেই বেছে নিয়েছেন তামিম ইকবাল। তাই বলে একটা সেঞ্চুরি করবেন, আর তাতে ছক্কা থাকবে না? সেটাও না হয় মানা গেল। কিন্তু ট্রিপল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেও একটা ছক্কা নেই? তামিম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাবলীল ব্যাট করে প্রতিপক্ষকে দেননি কোনো সুযোগ, নেননি অযথা ঝুঁকি। টানা দেড় দিন ধরে লম্বা সংস্করণের আদর্শ ব্যাটিংটাই করে দেখিয়েছেন পূর্বাঞ্চলের ওপেনার। তাই রেকর্ড গড়া ট্রিপল সেঞ্চুরির চেয়েও নিজের ব্যাটিংয়ের ধরন তামিমকে দিচ্ছে বেশি আনন্দ আর সন্তুষ্টি।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগের দিনই ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন তামিম। রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিসিএলের প্রথম রাউন্ডের এই ম্যাচের তৃতীয় দিনে সবার দৃষ্টি ছিল- কোথায় গিয়ে থামেন তামিম। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো ত্রিশতক ছুঁয়ে তিনি অপরাজিত থাকেন ৩৩৪ রানে। এদিনও কোনো নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাটিং করেননি তিনি। ব্যক্তিগত ২৬৫ রানে অফ-স্টাম্পের বাইরে একটা বলে ব্যাট চালিয়েছিলেন। যার ফলে গালি দিয়ে বাউন্ডারি পান তামিম। পুরো ইনিংসে ওই একটি শটই ছিল কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যথায় নিখুঁত এক ইনিংস খেলেছেন দেশসেরা ওপেনার।
মধ্যাঞ্চলের বিপক্ষে রেকর্ড গড়লেও, রান কত করলেন তার চেয়ে তামিমের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়েছে নিজের ব্যাটিংয়ের ঢঙ ও মেজাজ, ‘অবশ্যই, এটা বিশেষ অনুভূতি। সত্যি কথা বলতে, আমি কখনো চিন্তা করিনি যে আমি তিনশো রান করব। স্বপ্ন সবারই থাকে, তবে এই ম্যাচেই হয়ে যাবে ভাবিনি। আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো, যেভাবে আমি ব্যাট করেছি। আমি কত রান করেছি এটা না, সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্টির ছিল আমি যেভাবে ব্যাট করেছি সেটা। খুশি... কিন্তু আমি আশা করব, এই ছন্দ আমি যেন ধরে রাখতে পারি।’
নিজের ম্যারাথন ইনিংসে অবশ্য ৩টি ছক্কা হাঁকান তামিম। তবে সেটা একেবারে শেষদিকে। ট্রিপল সেঞ্চুরি করার বেশ পরে। তামিম জানালেন, তার পরিকল্পনাই ছিল এমন, ‘আমার কাছে মনে হয়, আমি খুব দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। উইকেট খুব ভালো ছিল, উইকেট স্পিনিং ছিল না বা ভিন্ন কিছু আচরণ করছিল না। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি বিষয়টা খুব সাধারণ রাখতে পেরেছি। ৩০০ রান করার পরেই আমি কিছু সুযোগ নিয়েছি। পুরো ইনিংসে কখনো আমার কাছে মনে হয়নি যে আমাকে বিশেষ কিছু করতে হবে। আমি ব্যাটিং করে গিয়েছি, ক্রিকেটিং শট খেলে গিয়েছি। আর সবসময় চেষ্টা করছিলাম... ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টা না করে চার মারার দিকে যেতে চেয়েছিলাম আমি।’
তিনশো রান যে করতে পারবেন, এমনটা আগে থেকে ভাবেননি তামিম। নিজের স্বাভাবিক ব্যাটিং করে ২৮০ রান পার করার পর ট্রিপল সেঞ্চুরি ছোঁয়ার দিকে মনোযোগ দেন তিনি, ‘যখন আমার ২৬০-৭০ হয়ে গিয়েছে, সত্যি কথা বলতে, তখনো এটা নিয়ে ভাবছিলাম না। ২৮০ যখন হলো, তখন এটা নিয়ে চিন্তা করা শুরু করেছি। আমার কাছে মনে হচ্ছিল, আমি এটা নিয়ে যদি বেশি চিন্তা করি, তাহলে যে পরিকল্পনা নিয়ে আমি ব্যাটিং করছি, তাতে বিঘ্ন ঘটবে বা অন্যভাবে খেলার চেষ্টা করব। তো আমি খেলাটাকে খুব সাধারণ রাখার চেষ্টা করেছি আর সেটাই আমার পক্ষে এসেছে।’
ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির আসর বিসিএলে এদিন পূর্বাঞ্চলের হয়ে মধ্যাঞ্চলের বিপক্ষে ৪২৬ বলে ৩৩৪ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন তামিম। রকিবুল হাসানের ১৩ বছর পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন তিনি। রকিবুলের ৩১৩ রান ছাড়িয়ে উঠে যান চূড়ায়। দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে তার ইনিংসটিই এখন সর্বোচ্চ। নিজের ইনিংসটি ৪২টি চার ও ৩টি ছক্কায় সাজান তামিম।

Post a Comment

0 Comments